Wednesday, January 22, 2025
Google search engine
Homeখবরস্বাধীনতা দিবস একাত্তরের আত্ম–অনুসন্ধান

স্বাধীনতা দিবস একাত্তরের আত্ম–অনুসন্ধান

আমরা একাত্তর সালে স্বাধীন হয়েছি। ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। মাঝের ২৬৬ দিন ছিল তার গর্ভযন্ত্রণার কাল।

প্রতিবছর ধুমধাম করে আমরা দিবসটি উদ্​যাপন করি। রঙিন আলোয় ভবনের দেয়াল দিই ঢেকে। রাস্তায় নিশান ওড়াই। আতশবাজি পোড়াই। কুচকাওয়াজ করি। ক্রোড়পত্র ছাপাই। বাণী দিই। কিন্তু এর পেছনে যে অগুনতি মানুষের লাঞ্ছনা, যন্ত্রণা, কান্না, রক্ত লুকিয়ে আছে, অনেক সময় তা আড়ালে চাপা পড়ে থাকে। আমরা উৎসব করি। চিরতরে হারিয়ে যাওয়া মানুষদের কথা মনে রাখি কয়জন!

৫২ বছর হয়ে গেল। আর কত দিন এভাবে চলবে? আরও ৫২ বছর কিংবা ১০০ বছর? তারপর? একাত্তরের প্রজন্ম যে আবেগ লালন করে, সেটি একসময় আর থাকবে না। তখন স্বাধীনতা দিবসের উদ্​যাপন কেমন হবে?

বাংলাদেশ তো চিরকাল পরাধীন ছিল না। একাত্তরে প্রথমবার স্বাধীন হয়নি। পুরো ইতিহাসটা আমাদের সামনে তুলে ধরলে বোঝা যেত। ত্রয়োদশ শতকে এ দেশ তুর্কি শাসকদের অধীনে চলে যায়। পরে কিছুকাল ছিল স্বাধীন সুলতানি আমল। আমরা ইলিয়াস শাহর কথা জানতে পারি। ওই সময় বাংলাকে দরবারের ভাষা করা হয়েছিল। মোগলরা বাংলা দখল করার পর আমরা দিল্লির শাসনে চলে যাই। মোগল বাদশাহর একজন সুবাদার, নায়েবে নাজিম কিংবা নবাব এ দেশ শাসন করতেন। বাদশাহ আকবরের সময় থেকে এ রকম চলে আসছিল। শাসকেরা ছিলেন বিদেশি। তাঁরা কেউ তুর্কি, কেউ আফগান, কেউ ইরানি-তুরানি-উজবেক। দরবারের ভাষা হয়ে গেল ফারসি। তাঁদের সঙ্গে জুটে যেত অনেক সৈন্যসামন্ত, বরকন্দাজ। তারাও বহিরাগত, মার্সেনারি। আজ এই শাসক তো কাল ওই শাসকের পেছনে জড়ো হতো, যখন যেখান থেকে টাকা বা জমি পেত। তারা একজনকে হটিয়ে কিংবা খুন করে আরেকজনকে শাসক বানাত। স্থানীয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের সংযোগ ছিল না।

১৭৫৭ সালে আমরা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরে কলোনি হওয়ার প্রক্রিয়ায় ঢুকি। এই প্রক্রিয়া চলেছিল ১০০ বছর। নবাব সিরাজউদ্দৌলা যে আর বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব নেই, এই খবর নেত্রকোনার গ্রামে পৌঁছাতে লেগেছিল হয়তো ৩০ বছর। মানুষের কাছে সরকার বা শাসক ছিল সেই লোক, যে তাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করত। সময়মতো খাজনা দিতে না পারলে তার ভিটায় ঘুঘু চরাত।

১৮৫৮ সালে বাংলা হয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পুরোপুরি উপনিবেশ। তারা এ দেশে নানান আইনকানুন চালু করে, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে। চালু করে পুলিশ বাহিনী, পেনাল কোড, বিচারালয়, স্থানীয় সরকার—আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। স্বাধীনতার ধারণা ও দাবি তখন থেকে। এরপর আমরা দুবার স্বাধীন হই। প্রথমবার ১৯৪৭ সালে। দ্বিতীয়বার ১৯৭১ সালে। দুবারই পাওয়া গেছে ভৌগোলিক স্বাধীনতা; অর্থাৎ আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র ও সার্বভৌম সরকার পেয়েছি।

আমরা মননে, আবেগে, কথায় ইলিয়াস শাহি স্বাধীনতা কিংবা পলাশীর পরাজয় নিয়ে এখন আর মাথা ঘামাই না। এসব এখন অতীত। এ দেশের মুসলমানরা ১৯৩০-৪০-এর দশকে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল। ১৯৪৭ সালে বাঙালি উঠতি মধ্যবিত্তের নেতৃত্বে আমরা পরিচিত প্রতিবেশীকে ছেড়ে দূরবর্তী পাঞ্জাব, সিন্ধি আর পাঠানদের সঙ্গে সিনায় সিনা মিলিয়ে একজোট হয়েছিলাম। তারপর ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের বড় লাট জিন্নাহ সাহেব সৈন্য পাঠিয়ে কালাতের আমিরকে ধরে এনে তাঁকে দিয়ে একটা কাগজ সই করিয়ে দিয়ে বানান বেলুচিস্তান প্রদেশ। আমরা হলাম পাঁচের মধ্যে এক।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments